শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-১

উপযুক্ত স্থান নির্বাচন

এসএসসি(ভোকেশনাল) - শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-১ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | NCTB BOOK

বাগদা চিংড়ি চাষের জন্য স্থান নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। চিংড়ি চাষে ঘেরের জন্য এমন স্থান নির্বাচন করতে হবে। যেখানে জোয়ার-ভাটার সময় পানির সরাসরি সংযোগ থাকে। মাটির ধরন হবে দোআঁশ বা এঁটেল দোআঁশ। ঘেরে যোগাযোগের জন্য রাস্তা থাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। চিংড়ি চাষের জন্য উপযুক্ত স্থান নির্বাচনের সময় নিচের বিষয় সমূহ বিবেচনা করা একান্ত প্রয়োজন।

ক. দূষণমুক্ত এলাকা: কলকারখানা ও ট্যানারি হতে বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ পরিশোধন ছাড়া সরাসরি নিক্ষেপের ফলে পানির দূষণ মাত্রাতিরিক্তভাবে বৃদ্ধি পেয়ে চিংড়ির মড়ক দেখা যায়। তাছাড়া মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পানির ভৌত-রাসায়নিক গুণাগুণ পরিবর্তিত হয়ে চিংড়ির জন্য প্রতিকূল পরিবেশের সৃষ্টি করে। সুতারাং এ সমস্ত এলাকায় চিংড়ি খামার স্থাপন না করাই ভালো। বরং দূষণমুক্ত এলাকা চিংড়ি খামারের জন্য নির্বাচন করতে হবে।

খ. অতি বৃষ্টিজনিত বন্যামুক্ত এলাকা: অতি বৃষ্টিজনিত ঢলের পানি খামারের পানির গুণাগুণ, যেমন- লবণাক্ততা, অক্সিজেন, পিএইচ ইত্যাদিও হঠাৎ পরিবর্তন করে দেয়, ফলে চিংড়ি চাষ ব্যাহত হয়। এ সমস্ত স্থানে বাঁধ নির্মাণ ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া বৃষ্টি ধৌত খোলা পানিতে জৈব ও অজৈব পদার্থের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে যা চিংড়ির ফুলকা পচনসহ অনেক রোগের সৃষ্টি করে। কাজেই অতি বৃষ্টিজনিত এলাকা পরিহার করে বন্যামুক্ত এলাকা চিংড়ি খামারের জন্য নির্বাচন করতে হবে।

গ. পানির উৎস: বাগদা চিংড়ি চাষের জন্য লবণাক্ত পানির প্রয়োজন। এছাড়া চিংড়ি চাষের জন্য অন্যান্য যে সব ভৌত-রাসায়নিক গুণাবলী থাকা প্রয়োজন তা সমুদ্রের পানিতে বিদ্যমান। তাই খামারের জন্য এমন স্থান নির্বাচন করতে হবে যেখানে চিংড়ি চাষের উপযোগী লবণাক্ত পানি পাওয়া যায়। তাছাড়া চিংড়ি চাষের জন্য যে সব উৎস বা আধার থেকে পানি সরবরাহ করা হবে তা অবশ্যই দূষণমুক্ত হতে হবে। তাছাড়া চিংড়ি খামার থেকে পানির উৎসের দূরত্বের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। দুরুত্ব বেশি হলে সার্বক্ষণিকভাবে পানি পাবার বিষয়টি অনিশ্চিত হওয়ার সাথে সাথে সরবারাহ ব্যয় বৃদ্ধি পাবে।

ঘ. জোয়ার-ভাটার বৈশিষ্ট্য: খামারের পানি পরিবর্তন, পানি নিষ্কাশন ও বাঁধের উচ্চতা নির্ধারণের জন্য খামার নির্মাণের স্থানে ভূমির উচ্চতার সাথে জোয়ার-ভাটার হ্রাস-বৃদ্ধির পরিমাণ জানা দরকার। যেসব স্থানে জোয়ার- ভাটার হ্রাস-বৃদ্ধির পরিমাণ ২-৩ মিটার, সেসব জায়গা খামার স্থাপনের জন্য অধিক উপযোগী। জোয়ার-ভাটার হ্রাস-বৃদ্ধি ৪ মিটারের বেশি বা ১ মিটারের কম হলে বাঁধ নির্মাণ ও পানি সরবরাহ ব্যয় বৃদ্ধি পাবে, ফলে চিংড়ি চাষ লাভজনক না হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ঙ. মাটির গুণাগুণ: মাটির পানি ধারণক্ষমতা ও ভেদ্যতা, মাটির উর্বরতা প্রভৃতি চিংড়ি চাষ পুকুরের জন্য অত্যাবশ্যকীয় বিষয়। মাটির গুণাগুণ ভালো না হলে খামার স্থাপন ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়। মাটি যত ভেদ্য হবে পানি চোয়ানোর হার তত বেশি হবে। খামার স্থাপনে মাটির যে গুণাগুণ থাকা প্রয়োজন তা নিম্নরূপঃ

১) অভেদ্য মাটি দেখে স্থান নির্বাচন করতে হবে, তা না হলে খামারে পানি ধরে রাখা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়।

২) মাটির পিএইচ ৫-৬.৫ থাকতে হয়।

৩) মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ ২.৫-৪.৩% থাকতে হয়।

৪) মাটির ধরন হবে দোআঁশ, বেলে-দোআঁশ বা এঁটেল দোআঁশ।

৫) অধিক অম্লযুক্ত মাটি চিংড়ি চাষের জন্য অনুপযোগী।

৬) দূষিত গ্যাসমুক্ত মাটি চিংড়ি চাষের জন্য বেশি উপযোগী। 

৭) অপ্রয়োজনীয়/অতিরিক্ত আগাছামুক্ত হতে হবে।

চ. পানির গুণাগুণ: পানির তাপমাত্রা, দ্রবীভূত অক্সিজেন, পানির লবণাক্ততা, পানির স্বচ্ছতা, পিএইচ, অ্যালকালিনিটি, হার্ডনেস, অ্যামোনিয়া ইত্যাদি চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এ সব প্রয়োজনীয় গুণাগুণ সঠিক মাত্রায় না থাকলে চিংড়ির উৎপাদন ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হয় । কাজেই চিংড়ি চাষের জন্য পানির নিম্নোক্ত গুণাগুণসমূহ পার্শ্বে উল্লিখিত মাত্রায় থাকা অপরিহার্য বলে বিভিন্ন গবেষণা তথ্যে পাওয়া যায়।

ছ. ভূ-প্রকৃতি: যেখানে খামার স্থাপন করা হবে সেখানকার ভূ-প্রকৃতি অবশ্যই জানা থাকতে হবে। ভূ-গর্ভস্থ পানির অবস্থানও জানা দরকার। লালচে ও এসিড সালফেটযুক্ত মাটি চাষের জন্য অনুপোযোগী। স্থানটি খামার স্থাপনের উপযোগি কি না শুরুতেই যাচাই করে নিতে হবে বিশেষ করে মাটির গঠন।

জ. অবকাঠামোগত সুবিধা: চিংড়ি খামারের প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ ও স্থানান্তরের জন্য উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রয়োজন। রাস্তা-ঘাট ও যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না হলে চিংড়ি বিক্রির ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দিতে পারে। সর্বোপরি বন্যামুক্ত এলাকা চিংড়ি চাষের জন্য উপযোগী। এজন্য বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ আছে এবং পানি নিয়ন্ত্রণের জন্য ফ্লুইস গেট আছে এমন এলাকা নির্বাচন করা উচিত।

ঝ. বিদ্যুৎ সরবরাহ: চিংড়ি খামারে বিদ্যুৎ থাকা জরুরি। খামারের স্থান নির্বাচনের সময় বিদ্যুৎ পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকা আবশ্যক। বিদ্যুৎ না থাকলে ডিজেল চালিত পাম্পে জ্বালানি খরচ বেশি লাগবে। পানি অপসারণ বা খামারে পানি প্রবেশের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সবচেয়ে সুবিধাজনক ও সাশ্রয়ী বিধায় বিদ্যুতের নিশ্চয়তা আবশ্যক।

ঞ. দক্ষ জনশক্তি: চিংড়ি খামার লাভজনক করতে হলে দক্ষ জনশক্তির কোন বিকল্প নেই। খামারে সহনশীল উৎপাদন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ ও অধিক উৎপাদনের জন্য খামারের দক্ষ জনশক্তি নিয়োগ করতে হবে। তাই দক্ষ জনশক্তির পর্যাপ্ততা বিবেচনা করে চিংড়ি খামার স্থাপন করা উচিত।

ট. উৎপাদন সামগ্রীর প্রাপ্যতা ও সরবরাহ: এমন জায়গায় চিংড়ি খামার স্থাপন করা উচিত যেখানে খুব কাছাকাছি হাট বাজার আছে, যার ফলে খুব সহজেই খামার স্থাপন ও পরিচালনার জন্য সার, চুন, যন্ত্রপাতি ও মেরামত সামগ্রী সংগ্রহ করা যায়। এছাড়া দূরবর্তী বাজার থেকে সংগ্রহ করতে হলে প্রয়োজনীয় পরিবহণ ব্যবস্থা থাকা উচিত।

ঠ. বিরোধমুক্ত এলাকা: বিরোধপূর্ণ এলাকায় চিংড়ি খামার স্থাপন করা উচিত নয়। এতে সামাজিক ও পরিবেশগত বিপর্যয়ের সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া চিংড়ি একটি মূল্যবান ফসল হওয়ায় খামারের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার বিষয়টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় জনবলের ব্যবস্থা করাসহ কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

Content added || updated By
Promotion